প্রধান উপদেষ্টার হাতে সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন তুলে দেন কমিটির সদস্যরা। ছবি : বাসস
বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনও ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনা তদন্তে গঠিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের লুজ কানেকশন থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে।
নির্ধারিত সময় শেষে মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। পরে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি এসব তথ্য জানান।
আগুনের কারণ অনুসন্ধানে একাধিক টিম কাজ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তারমধ্যে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল, ফায়ার সার্ভিসের বিশেষজ্ঞরা ছিলেন, সেনাবাহিনীর বোম্ব স্কোয়াড, বিশেষায়িত কুকুর এবং পুলিশ বাহিনী থেকে সিআইডি থেকে কাজ করেছে। আমরা সবাই একমত হয়েছি ‘লুজ কানেকশন’এর কারণে আগুণের উৎপত্তি হয়েছিল-এটা প্রাথমিকভাবে আমাদের অনুসন্ধান।
“এতে অন্য কোনও ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা আমরা খুঁজে পাইনি।’
গত বুধবার মধ্যরাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। সেদিন রাত ২টায় আগুন লাগার খবর পেয়েই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে যান সেখানে। ১০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভানো হয় বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট।
সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের তদন্ত কমিটির সদস্য ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বলেন, “আমরা প্রথমদিন থেকে আন্তরিকভাবে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় আমরা সুনির্দিষ্ট একটি রিপোর্ট তৈরি করতে পেরেছি। যদিও সুনির্দিষ্ট বলছি, তারপরও এটিকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করার জন্য আরও বেশ কিছু টেস্ট দেশে-বিদেশে করাব।
“আমরা স্যাম্পল পাঠিয়েছি। সে রিপোর্টগুলো পেলে আমাদের রিপোর্ট আরও নিশ্চিত হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি, ভিডিও পাওয়ার আগে এবং পরে মিলিয়ে দেখেছি, ফলাফল একই।”
অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বলেন, “প্রাথমিকভাবে দেখেছি আগুনের সূত্রপাত রাত ১টা ৩২ মিনিট থেকে ১টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত। সাত মিনিট ধরে আস্তে আস্তে ‘স্পার্ক’ এর মাধ্যমে যে জায়গায় আগুন লেগেছে সেটি গরম হয়েছে, সেখান থেকে ম্যাটেরিয়াল খসে খসে পড়েছে। তারপর সেটা একসময় ইগনিশন টেম্পারেচারে গিয়েছে। তারপর আগুন ধরেছে। আগুন ধরার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়া হয়েছে এবং আগুনের ফ্লেম তৈরি হয়েছে।”
সচিবালয়ের একটা টানেলের কারণে আগুন পশ্চিম দিক থেকে পূব দিকে বেরিয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে সোর্স একটাই, কিন্তু বাতাসের গতি, ভবনের ডিজাইনের ভিন্নতার কারণে পূবদিকে আগুন প্রবাহিত হয়েছে। এসব কারণে ভার্টিক্যালি উপরে উঠে গেছে এবং নেভানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। এই কারণে আগুন নেভানো কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ছিল।
“আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি, সবকিছু পর্যালোচনা করেছি, নিশ্চিত হয়েছি এভাবেই আগুনটা সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ফায়ার অ্যানালাইসিস থেকে প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে পরবর্তী পর্যায়ে পুলিশের সিআইডি থেকে পাওয়া ভিডিওর সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছি, আমাদের অঙ্ক করা জিনিস আর ভিডিও এভিডেন্স ৯৯ ভাগ মিলে গেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি আগুন এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। এভাবেই প্রবাহিত হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টামণ্ডলীর জরুরি সভায় এ ঘটনা তদন্তে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের এই তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
সেদিন সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ভয়াবহ ও নজিরবিহীন আখ্যায়িত করে এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি।
সেখানে বলা হয়, “বিবৃতিতে নাগরিক কমিটি এ অভিযোগ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ”সচিবালয়ের মতো একটি নিরাপত্তাবেষ্টিত স্থানে এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র বলেই আমরা মনে করি। এ ঘটনায় দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতির চিত্র ফুটে উঠেছে।”
প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু, কেপিআই স্থাপনা সচিবালয়ে এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ষড়যন্ত্রের সন্দেহ করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ হোসেন, যিনি জুলাই অভ্যুত্থানেরও নেতা। তার সন্দেহ ধরে নাশকতার আলোচনাও চলে সোশাল মিডিয়ায়।