আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, বিএনপি বলে শেখ হাসিনা নাকি দেশ বিক্রি করছে। কিন্তু বিএনপি তো সুযোগ পেলে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করে দিত। বিক্রি নয়, এমিনেই তো দিয়ে দিত। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনোদিন দেশ বিক্রির রাজনীতি করে না। শেখ হাসিনা ত্যাগের রাজনীতি করে। কারো কাছে দেশ বিক্রি তো দূরের কথা এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিন্দুমাত্র নষ্ট হবে তা কখনো বঙ্গবন্ধু কন্যা মানবে না।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, শেখ হাসিনা গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি করেছেন। নিশ্চয় তিস্তা সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। ইনশাল্লাহ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করবেন। স্বাধীনতার পর থেকে যারা ভারতের বিরোধিতা করে আসছে, তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু, পাকিস্তানের এজেন্ট। তাদের উচিত এ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি, ছিটমহল বিজয় করেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যার তো কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। বাপ হারিয়েছেন, মা হারিয়েছেন, ভাই হারিয়েছেন। তার একটাই চাওয়া, যদি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ করতে পারেন। শেখ হাসিনার একটা বাড়িও নেই। নিজে সরকারি বাড়িতে থাকেন, তার স্বামীর একটা বাড়ি আছে। তোদের এক একজন তো লন্ডনে থাকিস, কোথা থেকে আসে?
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা প্রসঙ্গে এই সংসদ সদস্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর কিছু কর্মীও বঙ্গবন্ধুকে বিরক্ত করেছিল। এজন্য অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করতে পেরেছিল। বঙ্গবন্ধু যাদেরকে নিজ হাতে খাইয়েছেন, মাসে মাসে টাকা দিয়েছেন, তারাও রেডিও স্টেশনে গিয়ে খুনিদের সমর্থন দিয়েছিল। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে, গণবাহিনীর নামে বিরোধিতা করেছেন। যারা বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করেছে, তারা নেত্রীকেও আঘাত করতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
শেখ সেলিম বলেন, বিএনপি নেতারা ভারতের পণ্য বর্জন করতে বলছে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। অনেক কিছু ভারত থেকে আমাদের আমদানি করতে হয়। ভারত থেকে প্রায় ১৩-১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করতে হয়। সবার আগে ভারতের যে কাপড় চোপড় বিএনপি নেতাদের ঘরে আছে সেগুলো বর্জন করার কথা বলে তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় ভারত বিরোধীতায় থাকে, তাদের প্রেম পাকিস্তানের প্রতি। এক শ্রেণির লোক আছে বাংলাদেশের উন্নতি চায় না, ভালো চায় না বিএনপি হলো তাদের দলের।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের দুর্দিনের বন্ধু, যা রক্তের অক্ষরে লেখা। যুদ্ধের পরে মিত্রবাহিনী এত তাড়াতাড়ি দেশ ছেড়ে চলে যায়, এমন ইতিহাস পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু বিএনপি ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সব সময় ভারতের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিচ্ছে। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা প্ররোচনা চালায় ভারত বাংলাদেশকে নিয়ে নেবে, দখল করবে। অথচ বাংলাদেশের যুদ্ধে প্রায় ১৮ হাজার সৈন্য আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মৃত্যু বরণ করে।
বঙ্গবন্ধু ১০ জুন পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে রেড ক্রিসেন্ট ময়দানে বলেছিলেন, ‘আমি যেদিন বলবো সেদিন মিত্র বাহিনী এ দেশ থেকে চলে যাবে।’ ১৭ মার্চ মিসেস গান্ধী এদেশে আসেন। তার আগে মিত্র বাহিনী এদেশ থেকে চলে যায়। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, কুয়েতে মার্কিন সৈন্য সুপারভিশনে আছে। কিন্তু বাংলাদেশে তা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আরো বক্তব্য রাখেন, এমপি শামীম শাহনেওয়াজ, শফিকুর রহমান, নজরুল ইসলাম, জ¦রতী তঞ্চঙ্গা, মোতাহুরুল ইসলাম চৌধুরী, নাজমা আক্তার, মোতাহার হোসেন, ইমরান আহমেদ, ওয়াকিল উদ্দীন, আহম্মদ হোসেন, অপরাজিতা হক, আক ম বাহাউদ্দিন, শামীমা হারুন, শাহাজাদা মান্নান, আব্দুল মালেক প্রমুখ।