১০:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পলাতক রিপনের ১২০৯ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করবে কে?

গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। এলাকার মানুষকে দেখাতেন নানান স্বপ্ন। দিয়েছেন অনেক প্রতিশ্রুতি। তবে কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করেননি তিনি। উল্টো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর পালিয়েছেন মাহমুদ হাসান রিপন। জানা গেছে, এক হাজার ২০৯ কোটি টাকার ঋণখেলাপি তিনি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাইবান্ধা-৫ আসনে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ছিলেন অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী। তখন থেকে মাহমুদ হাসান রিপন আলাদা করে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রাম করতেন। উন্নয়নের বাণী শোনাতেন জনগণকে। তবে তিনি এমপি না হওয়ার কারণে এলাকার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানাতেন। ফজলে রাব্বী মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে নির্বাচিত হন রিপন।

ছয় মাসের অল্প সময়ে এমপি হয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য বাজেট পেয়েছেন বলে জানান এলাকায়। কাজগুলো বাস্তবায়নে সময় লাগবে আশ্বাস দিয়ে দ্বাদশ নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হন তিনি। তবে এলাকার জন্য কাজ করেননি সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা।

সাঘাটা উপজেলার সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘এমপি রিপন মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি একজন ক্ষমতালোভী ছিলেন। ক্ষমতার জন্য তিনি এই আসনের সবাইকে তার লোক হতে বাধ্য করেছিলেন।’

আজগর ব্যাপারী নামের আরেকজন বলেন, ‘এত টাকা ঋণ নিয়েছেন আমরা জানতাম না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। মানুষটি ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারের কাছে শুধু সুবিধা নিছে। এলাকার মানুষের জন্য কোনো উন্নয়ন করে নাই।’

ফুলছড়ির বাসিন্দা মঈন কামাল বলেন, ‘মোটা অংকের ঋণ নিয়ে রিপন দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য কিছু করেননি। নিজের ক্ষমতা আর সম্পদের পাহাড় গড়ার জন্য এমপি হয়েছিলেন।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, এস এম স্পিনিং মিলস লিমিটেডে ১ শতাংশ, এস এম নিটওয়্যারস লিমিটেডে ২.৪৮ শতাংশ এবং মায়ার লিমিটেডে ৬৫ শতাংশ শেয়ার দেখিয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬২৮, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০ কোটি ২ লাখ ৩১ হাজার ৯৩৮ টাকা, ডাচবাংলা ব্যাংক ৩৭৩ কোটি ১০ লাখ ২৬ হাজার ৭৬৪ টাকা, ইস্টার্ণ ব্যাংক ২০৬ কোটি ৫১ লাখ ৪ হাজার ৯৪৫ টাকা, যমুনা ব্যাংক ৩০ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার, ৭৭১ টাকা, সিটি ব্যাংক ৪৯ কোটি ৫ রাক ১১ হাজার ৫৪৩ টাকা, ব্যাংক এশিয়া ৭২ কোটি ৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৯০ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৭৮ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৬ টাকা, ইস্টার্ণ ব্যাংক ৬১ কোটি ৪০ লাখ ৭৭হাজার ৯৭৩ টাকা, সিটি ব্যাংক ৪৯ কোটি ৫ লাখ ১১ হাজার ৫৪৩ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৭৮ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৬ টাকা, ব্যাংক এশিয়া ৭২ কোটি ৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৯০ টাকা ও ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে ১০৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৫২ টাকা ঋণ নেন সাবেক এমপি মাহমুদ হাসান রিপন।

কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর মাহমুদ হাসান রিপনও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক হাজার ২০৯ কোটি টাকার ঋণখেলাপি রিপন।

ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদেকুল ইসলাম নান্নু জাগো নিউজকে বলেন, সাড়ে ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশের সব ব্যাংক লুট করেছেন। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। মাহমুদ হাসান রিপনকে দ্রুত গ্রেফতার করে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।

মাহমুদ হাসান রিপন ও তার ব্যক্তিগত সহকারী তারেক পালিয়ে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

জনপ্রিয় খবর

স্বরাষ্ট্র সচিব হলেন ড. নাসিমুল গনি

পলাতক রিপনের ১২০৯ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করবে কে?

সর্বশেষ আপডেট : ০৩:৪৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। এলাকার মানুষকে দেখাতেন নানান স্বপ্ন। দিয়েছেন অনেক প্রতিশ্রুতি। তবে কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করেননি তিনি। উল্টো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর পালিয়েছেন মাহমুদ হাসান রিপন। জানা গেছে, এক হাজার ২০৯ কোটি টাকার ঋণখেলাপি তিনি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাইবান্ধা-৫ আসনে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ছিলেন অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী। তখন থেকে মাহমুদ হাসান রিপন আলাদা করে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রাম করতেন। উন্নয়নের বাণী শোনাতেন জনগণকে। তবে তিনি এমপি না হওয়ার কারণে এলাকার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানাতেন। ফজলে রাব্বী মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে নির্বাচিত হন রিপন।

ছয় মাসের অল্প সময়ে এমপি হয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য বাজেট পেয়েছেন বলে জানান এলাকায়। কাজগুলো বাস্তবায়নে সময় লাগবে আশ্বাস দিয়ে দ্বাদশ নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হন তিনি। তবে এলাকার জন্য কাজ করেননি সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা।

সাঘাটা উপজেলার সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘এমপি রিপন মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি একজন ক্ষমতালোভী ছিলেন। ক্ষমতার জন্য তিনি এই আসনের সবাইকে তার লোক হতে বাধ্য করেছিলেন।’

আজগর ব্যাপারী নামের আরেকজন বলেন, ‘এত টাকা ঋণ নিয়েছেন আমরা জানতাম না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। মানুষটি ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারের কাছে শুধু সুবিধা নিছে। এলাকার মানুষের জন্য কোনো উন্নয়ন করে নাই।’

ফুলছড়ির বাসিন্দা মঈন কামাল বলেন, ‘মোটা অংকের ঋণ নিয়ে রিপন দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য কিছু করেননি। নিজের ক্ষমতা আর সম্পদের পাহাড় গড়ার জন্য এমপি হয়েছিলেন।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, এস এম স্পিনিং মিলস লিমিটেডে ১ শতাংশ, এস এম নিটওয়্যারস লিমিটেডে ২.৪৮ শতাংশ এবং মায়ার লিমিটেডে ৬৫ শতাংশ শেয়ার দেখিয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬২৮, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০ কোটি ২ লাখ ৩১ হাজার ৯৩৮ টাকা, ডাচবাংলা ব্যাংক ৩৭৩ কোটি ১০ লাখ ২৬ হাজার ৭৬৪ টাকা, ইস্টার্ণ ব্যাংক ২০৬ কোটি ৫১ লাখ ৪ হাজার ৯৪৫ টাকা, যমুনা ব্যাংক ৩০ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার, ৭৭১ টাকা, সিটি ব্যাংক ৪৯ কোটি ৫ রাক ১১ হাজার ৫৪৩ টাকা, ব্যাংক এশিয়া ৭২ কোটি ৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৯০ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৭৮ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৬ টাকা, ইস্টার্ণ ব্যাংক ৬১ কোটি ৪০ লাখ ৭৭হাজার ৯৭৩ টাকা, সিটি ব্যাংক ৪৯ কোটি ৫ লাখ ১১ হাজার ৫৪৩ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৭৮ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৬ টাকা, ব্যাংক এশিয়া ৭২ কোটি ৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৯০ টাকা ও ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে ১০৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৫২ টাকা ঋণ নেন সাবেক এমপি মাহমুদ হাসান রিপন।

কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর মাহমুদ হাসান রিপনও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক হাজার ২০৯ কোটি টাকার ঋণখেলাপি রিপন।

ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাদেকুল ইসলাম নান্নু জাগো নিউজকে বলেন, সাড়ে ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশের সব ব্যাংক লুট করেছেন। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। মাহমুদ হাসান রিপনকে দ্রুত গ্রেফতার করে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।

মাহমুদ হাসান রিপন ও তার ব্যক্তিগত সহকারী তারেক পালিয়ে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।