১১:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের গণগ্রেপ্তার সমর্থন করেন না সারজিস

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সেই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়টির হল শাখার নেতাকর্মীদের বিষয়ে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। ‘বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহ্বান করছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, অনেককেই বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগ করতে হয়েছে, যাদের অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন।

আজ সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাতে নিজের ফেসবুকে আইডিতে দেওয়া পোস্টে এ কথা বলেন সারজিস আলম। তিনি তার পোস্টে যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো—‘একটা বিষয়ে স্পষ্ট দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই ৷ বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই, তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহ্বান করছি ৷ ১ জুলাইয়ের পূর্বে এবং ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল ৷ এই আন্দোলনটা মেইনলি ১৫ তারিখ পর্যন্ত হলের ছেলেমেয়েরাই নিয়ে গেছে ৷’

সারজিস লেখেন, ‘যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা খুব ভালো করে জানেন, এখানে হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হত ৷ তাদের প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতে হত ৷ গণরুমে থাকতে হত ৷ সেজন্য হলে যারা থাকত, তাদের অধিকাংশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসব করত ৷’

এই সমন্বয়ক লেখেন, ‘এবার আরেক প্রসঙ্গে আসি ৷ হলের যে ছাত্রলীগের কমিটি হত এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকত কিছু কারণে–যেমন : ১. ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়, ২. যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়, ৩. অন্যরা যেন তার ওপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয় ৷ বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করত, অনেকে ভিন্ন মতের লোকদের ওপর অত্যাচার করত, অনেকে ক্যান্ডিডেট হত, অনেকে একটু ফাঁপর নিয়ে চলত৷’ তিনি আরও লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এই প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০ শতাংশ স্টুডেন্ট ৷ তারা যেমন পোস্টেড ছিল, তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেইস ছিল ৷ তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই আদার্স নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং একারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি ৷ এই পোস্টেড ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও এক হয়ে বের হয়ে আসার সাহস করতে পারত না ৷ ওই গার্টস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলাই শো করতে পারে ৷ হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিল এবং আন্দোলনটাকে প্রাথমিকভাবে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি৷

১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন না আসলে ৫ আগস্ট কখনও সম্ভব হত কি না সে বিষয়ে ঢের সন্দেহ আছে উল্লেখ করে সারজিস বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে হলের এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলব কিনা ৷ উত্তর : ফেলব না ৷ যারা ১ জুলাই থেকে আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে  নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে ৷ সত্য এটাই যে, এই আন্দোলন সফল না হলে এই ছেলেগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হত ৷ বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হত ৷ যে সিস্টেমের কারণে এদেরকে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট নিতে হয়েছে সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের সবাইকে দায়ী হতে হবে ৷ কারণ, আপনারা চুপ ছিলেন ৷ হলে, ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাঁধা দেননি ৷ ওরা যদি সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয় তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন৷ বরং, যখনই সুযোগ হয়েছে ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে৷ আর তখনও আপনি নীরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন ৷ এই ৮০ শতাংশ ছেলের কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তি হোক, কেউ যদি পরে কোনো অন্যায়ে জড়িত হয় তবে তদন্ত সাপেক্ষে তারও শাস্তি হোক ৷ কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে

জনপ্রিয় খবর

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের গণগ্রেপ্তার সমর্থন করেন না সারজিস

সর্বশেষ আপডেট : ০৬:০৯:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সেই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়টির হল শাখার নেতাকর্মীদের বিষয়ে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। ‘বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহ্বান করছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, অনেককেই বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগ করতে হয়েছে, যাদের অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন।

আজ সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাতে নিজের ফেসবুকে আইডিতে দেওয়া পোস্টে এ কথা বলেন সারজিস আলম। তিনি তার পোস্টে যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো—‘একটা বিষয়ে স্পষ্ট দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই ৷ বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই, তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহ্বান করছি ৷ ১ জুলাইয়ের পূর্বে এবং ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল ৷ এই আন্দোলনটা মেইনলি ১৫ তারিখ পর্যন্ত হলের ছেলেমেয়েরাই নিয়ে গেছে ৷’

সারজিস লেখেন, ‘যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা খুব ভালো করে জানেন, এখানে হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হত ৷ তাদের প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতে হত ৷ গণরুমে থাকতে হত ৷ সেজন্য হলে যারা থাকত, তাদের অধিকাংশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসব করত ৷’

এই সমন্বয়ক লেখেন, ‘এবার আরেক প্রসঙ্গে আসি ৷ হলের যে ছাত্রলীগের কমিটি হত এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকত কিছু কারণে–যেমন : ১. ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়, ২. যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়, ৩. অন্যরা যেন তার ওপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয় ৷ বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করত, অনেকে ভিন্ন মতের লোকদের ওপর অত্যাচার করত, অনেকে ক্যান্ডিডেট হত, অনেকে একটু ফাঁপর নিয়ে চলত৷’ তিনি আরও লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এই প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০ শতাংশ স্টুডেন্ট ৷ তারা যেমন পোস্টেড ছিল, তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেইস ছিল ৷ তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই আদার্স নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং একারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি ৷ এই পোস্টেড ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও এক হয়ে বের হয়ে আসার সাহস করতে পারত না ৷ ওই গার্টস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলাই শো করতে পারে ৷ হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিল এবং আন্দোলনটাকে প্রাথমিকভাবে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি৷

১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন না আসলে ৫ আগস্ট কখনও সম্ভব হত কি না সে বিষয়ে ঢের সন্দেহ আছে উল্লেখ করে সারজিস বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে হলের এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলব কিনা ৷ উত্তর : ফেলব না ৷ যারা ১ জুলাই থেকে আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে  নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে ৷ সত্য এটাই যে, এই আন্দোলন সফল না হলে এই ছেলেগুলোকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হত ৷ বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হত ৷ যে সিস্টেমের কারণে এদেরকে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট নিতে হয়েছে সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের সবাইকে দায়ী হতে হবে ৷ কারণ, আপনারা চুপ ছিলেন ৷ হলে, ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাঁধা দেননি ৷ ওরা যদি সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয় তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন৷ বরং, যখনই সুযোগ হয়েছে ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে৷ আর তখনও আপনি নীরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন ৷ এই ৮০ শতাংশ ছেলের কেউ যদি পূর্বে কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তি হোক, কেউ যদি পরে কোনো অন্যায়ে জড়িত হয় তবে তদন্ত সাপেক্ষে তারও শাস্তি হোক ৷ কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে