০১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিরপুরের পল্লবীতে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়েই ভাগ্নের জমির মালিক হয়েছেন খালা।

রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে ভাগ্নের জমির মালিক হয়েছেন খালা। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হয়েছে মালিকা হস্তান্তরও। সেই জমিতে আবার বহুতল ভবন নির্মাণ করছে ডেভেলপার কোম্পানি। তবে মৃত ভাগ্নের ওয়ারিশ কিভাবে হলেন খালা, সেই হিসাব মেলাতে পারছেন না কেউ। এ নিয়ে পুরো এলাকা জুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী মিরপুরের পল্লবীতে সেকশন ১২, ব্লক-সি, রোড-৩, ৪১ নং বাড়িটির ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা দাবি করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন নাসিমা মোস্তফা। জাগৃক অফিস থেকে নামজারির অনুমতি পত্র গ্রহণ করে সেই বাড়ি নাসিমা মোস্তফার নামে নামজারিও হয়েছে। তার কিছুদিন পরেই ১৫-১২-২০২১ ইং তারিখে ৮১০৬ নং দলিলে পিপলস এনরিচমেন্ট ডেভেলপমেন্ট লিঃ নামক ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে আম-মোক্তার দিয়েছেন নাসিমা মোস্তফা। কোম্পানির পক্ষে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম রফিক, মোঃ আলম, মোঃ জাহিদুর রহমান সোহেল, দলিল গ্রহীতা হিসেবে সাক্ষর করেন ওই দলিলে।

কাগজে কলমে সবইতো ঠিকঠাক। তাহলে প্রশ্ন হলো অনিয়মটা কোথায়? এমনই গোলক ধাঁধাঁয় শুরু হয়  অনুসন্ধান। আর এতেই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।

নামজারির আবেদনে মরহুম নজরুল ইসলামের ছেলে ওই বাড়ির মালিক মৃত তফিকুল ইসলাম সুমনের একমাত্র ওয়ারিশ হিসেবে দেখানো হয়েছে খালা নাসিমা মোস্তফাকে। ওয়ারিশানা সনদ সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যাড-সিল ও সই ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের। ওয়ারিশান সনদপত্র প্রদানের তারিখ ৫-০৪-২০১৮ ইং তারিখে। জাতীয় পরিচিত পত্র নং- ১৯৬০২৬৯৬৪০২০০০১৪৭ এবং জন্ম তারিখ- ২৮-০৮-১৯৬০ইং সাল। যদিও এই জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বারের কোন তথ্য নির্বাচন কমিশনারের সার্ভারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানের শুরুটা হয় সেই ওয়ারিশ সনদ নিয়েই।

ভাগনের ওয়ারিশ কিভাবে হলেন খালা সেই প্রশ্ন রাখা হয় ওই ওয়ারিশ সনদে সাক্ষর করা ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের কাছে। বিষয়টি জানান পর রিতিমতো চোখ ছানাবড়া ওই কাউন্সিলরের। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এমন কোন ওয়ারিশ সনদ তিনি দেননি। এমনকি ওই ওয়ারিশ সনদের সিল-সাক্ষর সবই নকল। কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, কোন অসৎ উদ্দেশ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভুয়া প্যাড-সিল, নমুনা সই ব্যবহার করে জাল ওয়ারিশ সনদ তৈরি করা হয়েছে।প্রতিবদেকের কাছে বিষয়টি জানার পর গত ২৬-০৮-২০২৩ ইং তারিখে কাউন্সিলর মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, বাদী হয়ে পল্লবী থানা একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নাম্বার- ২১৯৯/২০২৩।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, পল্লবী থানার এসআই মনজুরুল বলেন, আমি বিষয়টি জানি এবং আমি কোর্টে পাঠাইছি, অনুমতি আসলে শুরু হবে তদন্ত। এবার যাওয়া হয় ব্লক-সি, রোড-৩ এর ৪১ নম্বর বাড়িটিতে। যেখানে দেখা যায়, পিপলস এনরিচমেন্ট ডেভেলপমেন্ট লিঃ এর সাইনবোর্ড লাগানো। সাইনবোর্ডে থাকা নাম্বারে যোগাযোগ করলে, কোম্পানির মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এই বাড়ির মালিক নাসিমা মোস্তফা থেকে পাওয়ার নিয়েছি ডেভেলপ করার জন্য। কাগজ পত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা জমির মালিকের সাথে যোগাযোগ করেন, আমি নাম্বার দিচ্ছি।

সেখান থেকে মুঠোফোনের নাম্বার সংগ্রহ করে নাসিমা মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অসুস্থতার অযুহাতে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এর কিছুদিন পরে আবারও মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন আমি সুমনের খালা, আমি ওয়ারিশ সূত্রে মালিক। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আমার নামে নামজারি করে দিয়েছে। নামজারি বলে, আমি ডেভলপার কোম্পানিকে পাওয়ার দিয়েছি। জটিল এই প্রক্রিয়ার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, আমারও লোকজন আছে। সেনাবাহিনীতে আমার ভাই রয়েছে আপনাকে ফোন দিবে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন নাসিমা মোস্তফা।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় এলাকাবাসীও হতবাক। তারা বলছেন, এই বাড়ির প্রকৃত মালিক মরহুম তফিকুল ইসলাম (সুমন)। তার কোন ওয়ারিশ ছিল না। এখানে তার কোন আত্মীয়-স্বজন নেই। তবে কিভাবে নাসিমা মোস্তফা সুমনের সম্পদের মালিক হলেন? আর কিভাবেই ভুয়া ওয়ারিশ সনদে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ভাগ্নের বাড়ির মালিক হিসেবে নাসিমা মোস্তফাকে নামজারি করে দিলো? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চলছে জাতীয় দৈনিক খবরের আলোর অনুসন্ধান।

 

স্বরাষ্ট্র সচিব হলেন ড. নাসিমুল গনি

মিরপুরের পল্লবীতে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়েই ভাগ্নের জমির মালিক হয়েছেন খালা।

সর্বশেষ আপডেট : ০৯:৩৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে ভাগ্নের জমির মালিক হয়েছেন খালা। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হয়েছে মালিকা হস্তান্তরও। সেই জমিতে আবার বহুতল ভবন নির্মাণ করছে ডেভেলপার কোম্পানি। তবে মৃত ভাগ্নের ওয়ারিশ কিভাবে হলেন খালা, সেই হিসাব মেলাতে পারছেন না কেউ। এ নিয়ে পুরো এলাকা জুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী মিরপুরের পল্লবীতে সেকশন ১২, ব্লক-সি, রোড-৩, ৪১ নং বাড়িটির ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা দাবি করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন নাসিমা মোস্তফা। জাগৃক অফিস থেকে নামজারির অনুমতি পত্র গ্রহণ করে সেই বাড়ি নাসিমা মোস্তফার নামে নামজারিও হয়েছে। তার কিছুদিন পরেই ১৫-১২-২০২১ ইং তারিখে ৮১০৬ নং দলিলে পিপলস এনরিচমেন্ট ডেভেলপমেন্ট লিঃ নামক ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে আম-মোক্তার দিয়েছেন নাসিমা মোস্তফা। কোম্পানির পক্ষে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম রফিক, মোঃ আলম, মোঃ জাহিদুর রহমান সোহেল, দলিল গ্রহীতা হিসেবে সাক্ষর করেন ওই দলিলে।

কাগজে কলমে সবইতো ঠিকঠাক। তাহলে প্রশ্ন হলো অনিয়মটা কোথায়? এমনই গোলক ধাঁধাঁয় শুরু হয়  অনুসন্ধান। আর এতেই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।

নামজারির আবেদনে মরহুম নজরুল ইসলামের ছেলে ওই বাড়ির মালিক মৃত তফিকুল ইসলাম সুমনের একমাত্র ওয়ারিশ হিসেবে দেখানো হয়েছে খালা নাসিমা মোস্তফাকে। ওয়ারিশানা সনদ সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যাড-সিল ও সই ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের। ওয়ারিশান সনদপত্র প্রদানের তারিখ ৫-০৪-২০১৮ ইং তারিখে। জাতীয় পরিচিত পত্র নং- ১৯৬০২৬৯৬৪০২০০০১৪৭ এবং জন্ম তারিখ- ২৮-০৮-১৯৬০ইং সাল। যদিও এই জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বারের কোন তথ্য নির্বাচন কমিশনারের সার্ভারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানের শুরুটা হয় সেই ওয়ারিশ সনদ নিয়েই।

ভাগনের ওয়ারিশ কিভাবে হলেন খালা সেই প্রশ্ন রাখা হয় ওই ওয়ারিশ সনদে সাক্ষর করা ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের কাছে। বিষয়টি জানান পর রিতিমতো চোখ ছানাবড়া ওই কাউন্সিলরের। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এমন কোন ওয়ারিশ সনদ তিনি দেননি। এমনকি ওই ওয়ারিশ সনদের সিল-সাক্ষর সবই নকল। কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, কোন অসৎ উদ্দেশ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভুয়া প্যাড-সিল, নমুনা সই ব্যবহার করে জাল ওয়ারিশ সনদ তৈরি করা হয়েছে।প্রতিবদেকের কাছে বিষয়টি জানার পর গত ২৬-০৮-২০২৩ ইং তারিখে কাউন্সিলর মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, বাদী হয়ে পল্লবী থানা একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নাম্বার- ২১৯৯/২০২৩।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, পল্লবী থানার এসআই মনজুরুল বলেন, আমি বিষয়টি জানি এবং আমি কোর্টে পাঠাইছি, অনুমতি আসলে শুরু হবে তদন্ত। এবার যাওয়া হয় ব্লক-সি, রোড-৩ এর ৪১ নম্বর বাড়িটিতে। যেখানে দেখা যায়, পিপলস এনরিচমেন্ট ডেভেলপমেন্ট লিঃ এর সাইনবোর্ড লাগানো। সাইনবোর্ডে থাকা নাম্বারে যোগাযোগ করলে, কোম্পানির মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এই বাড়ির মালিক নাসিমা মোস্তফা থেকে পাওয়ার নিয়েছি ডেভেলপ করার জন্য। কাগজ পত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা জমির মালিকের সাথে যোগাযোগ করেন, আমি নাম্বার দিচ্ছি।

সেখান থেকে মুঠোফোনের নাম্বার সংগ্রহ করে নাসিমা মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অসুস্থতার অযুহাতে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এর কিছুদিন পরে আবারও মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন আমি সুমনের খালা, আমি ওয়ারিশ সূত্রে মালিক। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আমার নামে নামজারি করে দিয়েছে। নামজারি বলে, আমি ডেভলপার কোম্পানিকে পাওয়ার দিয়েছি। জটিল এই প্রক্রিয়ার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না, আমারও লোকজন আছে। সেনাবাহিনীতে আমার ভাই রয়েছে আপনাকে ফোন দিবে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন নাসিমা মোস্তফা।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় এলাকাবাসীও হতবাক। তারা বলছেন, এই বাড়ির প্রকৃত মালিক মরহুম তফিকুল ইসলাম (সুমন)। তার কোন ওয়ারিশ ছিল না। এখানে তার কোন আত্মীয়-স্বজন নেই। তবে কিভাবে নাসিমা মোস্তফা সুমনের সম্পদের মালিক হলেন? আর কিভাবেই ভুয়া ওয়ারিশ সনদে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ভাগ্নের বাড়ির মালিক হিসেবে নাসিমা মোস্তফাকে নামজারি করে দিলো? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চলছে জাতীয় দৈনিক খবরের আলোর অনুসন্ধান।