ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরের একটি গ্রামের ছোট মাঠে একদল মানুষ অপেক্ষা করছেন। রঙিন পতাকা ও সাজানো গাড়ির এক বহর এসে সেখানে পৌঁছায়। পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডিপি) নেত্রী ইলতিজা মুফতি গাড়ির ছাদ দিয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসেন। তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘যখন মুফতি ক্ষমতায় আসবে’। জবাবে উপস্থিত জনগণ সম্মিলিত কণ্ঠে সাড়া দেয়, ‘তখন নির্যাতন শেষ হবে’।
সুরক্ষিত পোশাক পরা সেনারা বন্দুক হাতে দূর থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দীর্ঘ এক দশক পর কাশ্মীরে ৪৭টি আসনে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিতর্কিত এই অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতা ও অস্থিরতায় ভুগছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহ কাশ্মীরকে উত্তপ্ত করে তুলেছে, যা হাজার হাজার মানুষের প্রাণ নিয়েছে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই খবর জানায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এবারের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে শুধু কাশ্মীর নয়, পার্শ্ববর্তী হিন্দু-অধ্যুষিত জম্মুর ৪৩টি আসনেও ভোট হবে। এটি ২০১৯ সালের পর প্রথম নির্বাচন, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে এবং এটিকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে দেয়। তখন থেকে এই অঞ্চল কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নির্বাচনে ১৩টি প্রধান দল অংশ নিচ্ছে, যারা ৯০টি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
নির্বাচনের মূল প্রতিযোগিতায় রয়েছে পিডিপি ও ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)। পিডিপির নেতৃত্বে আছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং এনসির নেতৃত্বে আছেন ওমর আবদুল্লাহ। এনসি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছে। মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, যদিও উপত্যকায় তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল।
২০১৪ সালের নির্বাচনে জম্মুতে বিজয়ী হয়ে পিডিপির সঙ্গে মিলে বিজেপি সরকার গঠন করেছিল। তবে, ২০১৮ সালে মতানৈক্যের কারণে সেই জোট ভেঙে যায়। এবারের নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার রশিদ, যিনি পাঁচ বছর জেলে কাটানোর পর সন্ত্রাস মামলায় জামিনে মুক্ত হয়েছেন। রশিদ এবছর সাধারণ নির্বাচনে ওমর আবদুল্লাহকে হারিয়ে চমকপ্রদ জয়লাভ করেন।
কাশ্মীরে নির্বাচনের ইতিহাস সবসময় বিতর্কিত। এখানকার জনগণ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা নির্বাচন বর্জন করে। কারণ, তারা একে দিল্লির নিয়ন্ত্রণ বৈধ করার প্রয়াস হিসেবে দেখে। ১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মীরে ১২টি বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ভোটার উপস্থিতি সবসময় কম ও সহিংসতায় ভরা। এবার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারাও কিছু আসনে অংশ নিচ্ছেন, যা ভোটারদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনেকেই কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করেন না।
গবেষক সুহিল মীর বলেছেন, ‘আমি মনে করি না ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনা হবে। তবে দলগুলো এটিকে ব্যবহার করে ভোটের জন্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে’। অন্যরা বলছেন, তারা শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিতে চান।